ভারত তথা সমগ্র এশিয়ার প্রথম আয়ুর্বেদিক কলেজ কলকাতাতেই! আজও মানুষের কাছে অজানা প্রতিষ্ঠাতা যামিনী ভূষণ এর কথা

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ফরিয়াপুকুর স্ট্রিটে মেডিকেল কলেজের কথা শুনলে হয়তো অনেকেই অবাক হতে পারেন। একসময় ২৯ নম্বর বাড়িটা অযত্নে বহুদিন ধরে পড়েছিল। যাকে বলা যেতে পারে লজঝরে অবস্থা। তবে হঠাৎই সেই বাড়ি মেরামতি করে গড়ে উঠলো আস্ত এক মেডিকেল কলেজ।
কিছুদিনের মধ্যেই চালু হয়ে গেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। আসতে শুরু করলো বেশকিছু শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি হত বিনামূল্যে চিকিৎসা। দারিদ্র দের চিকিৎসা করতে সেই কলেজে এসে হাজির হতেন প্রতিষ্ঠাতা।
১৯১৬ সালে গড়ে উঠেছিল ‘অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ কলেজ ও হাসপাতাল’। ভারত তথা এশিয়ার মধ্যে সেটাই ছিল প্রথম আয়ুর্বেদিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে আজ অবশ্য সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জে বি রায় স্টেট আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ নামে পরিচিত। ১৮৭৯ সালে অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্ম হয় যামিনী ভূষণের। তার বাবা ছিলেন নামকরা কবিরাজ। ওপার বাংলার বড় হয়ে উঠলেও তিনি পরবর্তীতে সংস্কৃত শিক্ষার জন্যই চলে আসেন এবার বাংলায়। এবার বাংলায় এসে ঘাঁটি গাড়েন কলকাতার বুকে। তারপর এক ভাড়া বাড়িতে কেউ বলত তার। স্নাতক স্তরে ভালো নাম্বার পেয়ে পাস করে ভর্তি হয়েছিলেন স্নাতকোত্তর স্তরে ও। তবে সংস্কৃতি যেন কিছুতেই তার মন বসছিল না হঠাৎ জেদ চেপে বসল তাকে চিকিৎসক হতে হবে।
সংস্কৃতের পাঠ চুকিয়ে ১৯০২ সালে ভর্তি হলেন কলকাতার মেডিকেল কলেজের। এর পাশাপাশি চলতে থাকলো বাবার কাছে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পাঠ ও। ১৯০৫ সালে গোল্ড মেডেল নিয়ে ব্যাচেলার অফ মেডিসিন পাস করেন তিনি। হয়ে উঠেছিলেন ‘গাইনোকলজি এবং মিডওয়াইফারি’ র বিশেষজ্ঞ। বাড়ি থেকে আপত্তি এবং সহপাঠীদের ঠাট্টা সবকিছুই উপেক্ষা করে যামিনী ভূষণ হয়ে গেলেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। সেই ঠাট্টা-বিদ্রুপ আপত্তির সপাটে উত্তর দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘রোজগার না জুটলে পাঁচন বেচেই পেট চালাব।’
১৯০৬ সালে পুনরায় সংস্কৃত নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়া শুরু করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তার সাথে সাথেই চলল উত্তর কলকাতার প্রথিতযশা কবিরাজ বিজয় রত্নসেন এর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক পঠন পাঠন। পাশাপাশি শুরু করলেন বগল মাড়োয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসার কাজ ও। সেই সময় তার মাসিক বেতন ছিল মাত্র চল্লিশ টাকা। তারপরই একসময় তিনি কোটিপতি হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন সময়ে। তবে কখনোই বিলাসবহুল জীবনের দিকে আকর্ষিত হননি তিনি। সেই টাকাতে তৈরি করেছিলেন দরিদ্রদের জন্য বৈদ্যরাজ ফার্মাসি। আধুনিক পদ্ধতিতে সেখানে তৈরি হতো ওষুধ। দরিদ্ররা বিনামূল্যেই পেতেন।
তারপরেই ফরিয়াপুকুরের বাড়ি ভাড়া নিয়ে শুধুমাত্র আয়ুর্বেদ চিকিৎসার জন্যই প্রতিষ্ঠা করলেন বিশেষ হাসপাতাল তথা মেডিকেল কলেজ। তার পরে বছর নয়েক পরে দিনেন্দ্র স্ট্রিটে গড়ে তুললেন নিজের এক আস্ত বাড়ি। যক্ষা চিকিৎসার জন্য তিনি পৃথক এক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কথা পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে অকাল প্রয়াণ তার সেই পরিকল্পনার রূপায়নের বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে ১৯২৬ সালে সকলকে ছেড়ে চলে যান তিনি।